স্বাগতম! টিআইবির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে। The Invincible 9/11 Bikers দেশের অন্যতম একটি বাইকার গ্রুপ। যা ক্লাব টিআইবি নামে বেশ পরিচিত। এই ক্লাবের উদ্যোগে আমরা বছরের বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন জেলার পর্যটন এলাকায় বাইক ট্যুর করে থাকি। সেই ধারাবাহিকতায় গত ২১-০৭-২০২৩ তারিখে আমরা বাইক ট্যুর করি নরসিংদীর লটকন বাগানে সহ কয়েকটি পর্যটন এরিয়ায়।
ঢাকা, গাজীপুর, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ সহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় ১০০+ বাইকার বাইক ট্যুরে অংশগ্রহণ করে। আমাদের রোড প্লান ছিল ঢাকা থেকে আগত বন্ধুরা পূর্বাচল ৩০০ ফিট হয়ে কাঞ্চন ব্রিজ দিয়ে ভুলতা, গাউছিয়া, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ এবং অপরদিকে কুমিল্লা, চাঁদপুর, লক্ষীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রাম জেলার ঐদিকের বন্ধুরা ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে রোডের পাশে কাচপুর হয়ে ভুলতা, গাউছিয়া রুপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ একসাথ হওয়ার কথা ছিল সকাল ৮.০০ ঘটিকায়। কিন্তু রাস্তায় জ্যাম এবং কুমিল্লা চট্টগ্রাম বন্ধুদের দূর হওয়ার কারণে তারা আসতে দেরি হয় ফলে আমরা ঢাকার বন্ধুরা নরসিংদী দিকে রওনা দেই।

আমাদের সবার গায়ে ছিল ক্লাব টিআইবির অফিসিয়াল টি-শার্ট এবং বাইক চালানোর নিয়ম ছিল আমাদের রূলস অনুযায়ী। ফলে আমাদের দেখে রাস্তার দুই পাশের মানুষের মধ্যে কৌতূহল এবং রাস্তার মধ্যে এক সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। রাস্তার দুইপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য, মনোরম প্রকৃতি সেই সাথে এমন বাইক রাইড সত্যি অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে। যেটা কেবল একজন ভ্রমণ প্রিয়াষু মানুষ বুঝতে পারবে।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা সকাল ৯.৩০ এরমধ্যে সাহিপ্রতাপ বাজার নরসিংদী সদরে পৌঁছি ।তারপর সেখানে কুমিল্লার বন্ধুদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকি এবং যে যার মত নাস্তা করি। সেখানে দেখা হয় দেশের অন্যতম একজন প্রবীণ বাইকারের সাথে, ওনার সাথে আমরা মতবিনিময় করি এবং ফটোসেশন করি। অতপর প্রায় আধা ঘন্টা পর কুমিল্লা বন্ধুরা সেখানে পৌছে যায় এবং সকাল ১০.০০ টায় আমরা সাহেপ্রতাপ থেকে লটকন বাগানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই। প্রায় ১০.৪৫ মিনিটে আমরা মরজাল বাজার বাস স্ট্যান্ড এ পৌঁছে যাই। যেটা নরসিংদীর লটকন বাজার হিসেবে বেশ পরিচিত।

মরজাল বাসস্ট্যান্ডের বাম পাশ দিয়ে আমরা লটকন বাগানে উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। যেতে যেতে রাস্তার দুই পাশে অনেকগুলো বাগান আমরা পরিদর্শন করলাম এবং বিভিন্ন ফটোশুট করলাম। লটকন বাগান গুলো দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। আল্লাহ সৃষ্টি কতই না সুন্দর। রাস্তা দুপাশে সারিসারি লটকন গাছ। লটকন ধরে আছে। সেই এক অপরূপ দৃশ্য। প্রকৃতির অপার মায়ায় হারিয়ে যেতে ইচ্ছে হয়। এলাকার মানুষগুলো বেশ মিশুক। বিশেষ করে বাগানের পাশের ঘর-বাড়ির মানুষ।

তারা আমাদের পানি দিয়ে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে। যেহেতু প্রচন্ড রোদ আর গরম ছিল , আমরা অনেক তৃষ্ণার্ত ছিলাম। কিন্তু আমাদের সাথে যে পানি ছিল সেটা দিয়ে পানির তৃষ্ণা মিটানো সম্ভব ছিল না। পানি দিয়ে আমাদের আপ্যায়ন করে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে। লটকন বাগানের সাথে আছে কাঁঠাল বাগান। বাগানের মধ্যে কাঁঠাল গাছ+লটকন একই সাথে। কাঁঠালগুলো বেশ চমৎকার ও অনেক বড়।

দেখলে যেমন চোখ জুড়িয়ে যায় ঠিক খেতেও অনেক সুমিষ্ট। এখানে মালিককদের সাথে কথা বলে অনেক তথ্য জানতে পারি, নরসিংদীর মাটি লটকন চাষের জন্য বেশ উপযুক্ত। লটকন ফল ছায়াযুক্ত স্থানে বেশ ভালো জন্মে। আপনি গেলে দেখতে পাবেন বাগান গুলো অনেকটা ছায়াস্থানে অবস্থিত। আশেপাশের পরিবেশটা অনেক নীরব ও শান্ত।
মালিকরা আরো বলেন, এই মৌসুমে নরসিংদীতে ১৬৯৫ হেক্টর জমিতে লটকনের চাষাবাদ করা হয়েছে। তাদের কাছে জানতে চাই, আপনাদের ধারণা অনুযায়ী কেমন টাকা বিক্রি হবে বলে আশা করেন, তিনি বলেন, আগের তুলনায় খরচ বেড়ে গেছে, পাশাপাশি শ্রমিকের মজুরি বেড়ে গেছে। ওষুধের দাম বেড়ে গেছে। তারপরেও পাইকারি আমরা ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা করে বিক্রি করতে পারলে আমাদের আড়াইশো কোটি টাকার মতো বিক্রি হওয়া সম্ভাবনা রয়েছে।

নরসিংদী জেলার সদর, বেলাবো, শিবপুর, মনোহরদী, পলাশ ও রায়পুরায় আংশিক অঞ্চলে লটকন চাষাবাদ করা হয়। বাগানের সংখ্যার দিক থেকে বেলাবো উপজেলায় সবচেয়ে বেশি লটকন বাগান রয়েছে। চাষিরা জানান, বিগত কয়েক বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবেই লটকন চাষবাদ শুরু হয়েছে। এর পূর্বে সবাই শখের বসে পারিবারিক ভাবে বাড়ির আঙিনায় লটকন গাছ লাগাতো কিন্তু যখন অধিক ফলন হওয়া শুরু করে এবং নিজেদের খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে তা বিক্রি করে লাভবান হয়, এর ফলেই বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু হয়।
বর্তমানে এই উপজেলার প্রধান কর্মসংস্থান হচ্ছে লটকনের চাষাবাদ। চাষী তোফাজ্জল মিয়া জানান, সাধারণত লটকন গাছের তেমন রোগ – বালাই হয় না। তবে কেবল ছত্রাক সহ কিছু রোগ দেখা দেয়। তাতে ছত্রাকনাশক/কীটনাশক ব্যবহার করলে তা সেরে যায়। যার কারণে হার লটকন চাষ লাভ বেশি হয়।
একটি গাছে কি পরিমাণ লটকন ধরে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একটি পূর্ণবয়স্ক লটকন গাছে পাঁচ থেকে দশ মন পর্যন্ত লটকন পাওয়া যায়। আর দিন দিন পরিমাণ বাড়তে থাকে। তিনি আরো বলেন, লটকন বিক্রির জন্য বর্তমানে বাজারে নিতে হয় না দূর দূরান্ত থেকে পাইকাররা এসে নিয়ে যায়। ফলে পরিবহন খরচটাও কম হয়।

সময় স্বল্পতার জন্য আমরা সেখানে আর বেশি দেরি না করে ১২.৩০ মিনিটে চলে যাই বেলাবো বাজার। বেলাবো বাজার হাই স্কুল মাঠে আমাদের যাত্রা বিরতি ও নামাযের জন্য বাইকগুলো নিয়ে জড়ো হই, সেখানে বড় দুটি কাঠাল ভেঙ্গে সবাই মিলে মিশে খেয়েছি। তারপর নামাযের জন্য চলে যাই বেলাবো বাজারের সবচেয়ে বড় মসজিদে। এই মসজিদটি দৃষ্টিনন্দন একটি মসজিদ। বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য মসজিদ গুলোর মধ্যে আমার মনে হয় এটি একটি। মসজিদের ভিতরে এবং বাইরে যেমন দৃষ্টিনন্দন কারু কাজ ঠিক তেমনি আশেপাশের পরিবেশটা অনেক সুন্দর, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। এটি একটি দেখার মত মসজিদ, যা লটকন বাগান দেখতে চাইলে এটিও দেখে যেতে পারবেন। এ মসজিদের আরো কিছু দৃষ্টিনন্দন ছবি দেখুন। সেখানে আমরা সবাই জুমার নামাজ আদায় করি।
এর মধ্যে হঠাৎ আমাদের গ্রুপ ক্রিয়েটর এডমিন বন্ধু আশিক সবাইকে অনুরোধ করে পাশে কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের আমোদপুর গ্রামে তার শশুরবাড়ি ও তার নবাগত সন্তান সেখানে আছে। আমাদের সবার মিষ্টির দাওয়াত। দুপুরের খাওয়ার আগে সবাই চলে যাই তার শশুরবাড়িতে। সেখানে আমাদের সবার মাঝে মিষ্টি বিতরণ করা হয়। সন্তান কোলে নিয়ে ফটোশূট করি। বন্ধুর সন্তান দেখে সবাই ফিরতি রওয়ানা করি দুপুরের খাওয়ার জন্য ঢাকা-সিলেট হাইওয়ে রোডের পাশেই অবস্থিত হোটেল মাহাতে ।

এটি মরজাল বাস স্ট্যান্ডে অবস্থিত। যেহেতু আমরা অনেক মানুষ ছিলাম সেহেতু আমাদের যাওয়ার আগেই হোটেল কর্তৃপক্ষের সাথে খাওয়ার আইটেম নির্ধারণ করা ছিল। খাবার আইটেমের মধ্যে ছিল মুরগির রোস্ট, ডাল, ভর্তা ও ভাজি। যা ১৫০ টাকায় নির্ধারণ করাছিল। এখানে খাওয়া-দাওয়া, বিশ্রাম, গান-গাওয়া ও মজা মাস্তি করে বিকাল ৩.০০ মিনিটে চলে যাই রায়পুরা উপজেলার সাহারখোলা মেঘনা ঘাটে।

পথিমধ্যে হানা দেয় বৃষ্টি, তাতে কি ? ভ্রমন প্রিয় মানুষের কাছে ঝড়,বৃষ্টি কিছুই না। বৃষ্টি পড়ছে বাইকের চাকা চলছে। সবাই ভিজা শরীর,আবার অনেকের কাদা মাটি মিশ্রিত শরীর নিয়ে ঘাটে উপস্থিত হই বিকাল ৪.০০ মিনিটে। সেখানে পৌঁছ মাত্রই মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এর মধ্যে কেউ রিসোর্টে ঢুকে পড়ছে আবার কেউ বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল খেলা শুরু করছে। তারপর হই-হুল্ল,বৃষ্টিতে ভিজে ফটোশুট, নদীতে গোসল, ফরমালিন মুক্ত সাগর কলা খাওয়া শেষ করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে যায়।
অতঃপর বৃষ্টির শেষ হলো, আমাদের বাড়ি ফেরাও শুরু হলো। সারাদিনের এই জার্নি লাইফে একটি টার্নিং পয়েন্ট হয়ে থাকবে। এতগুলো বন্ধু-বান্ধব ,এতগুলো বাইক । অবশেষে যে যার মত বাইক নিয়ে সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে সম্পূর্ণ বিপদমুক্ত হয়ে আমরা যে যার বাসা নিরাপদে আসতে পেরেছি, এর জন্য মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি, আলহামদুলিল্লাহ ।